top of page
Home: Blog2

৪র্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হওয়ার এখনই সময়ঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ ও তরুণসমাজ

Writer: Tareq AbrarTareq Abrar

লেখকঃ তারেক আবরার। -----

১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিশ্বে সংগঠিত হয় ১ম শিল্প বিপ্লব। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মাধ্যমে ১৮৭০ সালে শুরু হয় ২য় শিল্প বিপ্লব। এরপর ১৯৬৯ সালে তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবন দিয়ে শুরু হয়ে যায় ৩য় শিল্পবিপ্লব। বিশ্বপ্রগতির এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সমগ্রবিশ্বে আরেকটি মহাপরিবর্তন বা বিপ্লব সংগঠিত হতে যাচ্ছে। আর তাহলো ডিজিটাল বিপ্লব বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব।

এই ৪র্থ শিল্পবিপ্লব তথা এলগরিদম ও রোবোটিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজ নিজ জনশক্তিকে প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক উন্নত দেশে শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই শুরু হয়ে গেছে প্রোগ্রামিং শিক্ষার প্রসার। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের এ বিশেষ শাখাটি রয়ে গেল এখনও নতুন ও অধরা। 

আমাদের দেশে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানার সুযোগ সীমিত ছিল শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। এর অনেকদিন পর কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে এ বিষয় কিছুটা স্থান পেয়েছে। যার প্রভাব ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রযুক্তিতে দক্ষ-পর্যাপ্ত জনশক্তি তৈরির জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি/ল্যাবের অভাবেও এ বিষয়ে জ্ঞার্নাজন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

তাই দেশের স্কুল পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের মাঝে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস ও প্রোগ্রামিং বিষয়ের জ্ঞান এখনই ছড়িয়ে দেওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। এর জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় প্রযু্ক্তি যন্ত্রের সহজলভ্যতা। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি যন্ত্রের সহজলভ্যতার কথা বলতে হলে মোবাইল ফোনের কথাই বলা যায়। একটা স্মার্টফোনেই এখন প্রায় সব ধরনের প্রযুক্তিগত কাজ করা সম্ভব হয়। তবুও বাংলাদেশে জনশক্তির একটা বিরাট অংশ ৪র্থ শিল্পবিপ্লব তথা প্রযুক্তিগত ডিজিটাল বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত নয় কেন? তবে কি দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবেই জনশক্তির একটা বিরাট অংশ প্রযুক্তিতে সাংঘাতিকভাবে পিছিয়ে আছে?

হ্যাঁ, দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য একটি বড় বাধা। একে অতিক্রম করতে হলে প্রস্তুত হতে হবে তরুণদেরই। একজন শিক্ষার্থীকে একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ এবং একইসাথে একজন দক্ষ প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তার মাধ্যমে প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠবে আরো শত শত প্রযুক্তিবিদ ও প্রশিক্ষক। আর এভাবেই একদিন ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়ে যাবে বাংলাদেশ। আশার বাণী এটাই যে, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে এরূপ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আইটি ট্রেনিং নিচ্ছে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখছে, রোবোটিক্সের সাথে  পরিচিত হচ্ছে এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদের পাশাপাশি দক্ষ প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠছে।

তবে কি ৪র্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় শুধুমাত্র প্রযুক্তিজ্ঞান-ই যথেষ্ট? অন্যসব পেশা কি বিলুপ্ত হয়ে শুধু প্রযুক্তিনির্ভর পেশাই বিদ্যমান থাকবে? তাহলে কি প্রযুক্তিজ্ঞান ছাড়া অন্যসব লেখাপড়ার দরকার নেই?

এ প্রযুক্তিবিপ্লবের ফলে যেমন অনেক প্রথাগত পেশার বিলুপ্তি ঘটবে, তেমনি তৈরি হবে আরো অসংখ্য নতুন নতুন প্রযুক্তিনির্ভর পেশা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে কোনো একটা বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ড রাখা হয়। প্রযুক্তি বিপ্লবের ফলে সিকিউরিটি গার্ডের স্থান দখল করে নেবে একটা রোবোট!! কিন্তু, সেই রোবোট বানাতে কারখানাতে আরো অনেক নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়ে গেল!! তাই এ বিপ্লবের ফলে কর্মসংস্থান কমে যাবেনা, বরং বেড়ে যাবে।

কিন্তু, কেউ যদি মনে করে, শুধুমাত্র প্রযুক্তিজ্ঞানের মাধ্যমে এ বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব, তাহলে সেটাও ভুল ধারণা। কারণ, একটা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন শুধুমাত্র প্রযুক্তিবিদ/কম্পিউটার প্রোগ্রামার/রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সম্ভব নয়; এ কাজে সকল সেক্টরের লোক-ই দরকার আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটা কারখানাতে বর্তমানে একজন কেমিস্ট কাজ করেন। প্রযুক্তিবিপ্লবের ফলে সে কাজটা দখল করে নিল একটা রোবোট!! কিন্তু, রোবোটের তো কেমিস্ট্রি বা রসায়ন বুঝার নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা নেই!! তাই রসায়নবিদেরও দরকার আছে। 

অর্থাৎ, যে পেশাতেই ক্যারিয়ার গড়া হোক না কেন, প্রযুক্তিজ্ঞান না থাকলে ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা তো দূরে থাক, বরং সংকটে পড়তে হবে অনেককে। তাই এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিজ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে যোগাযোগ থেকে শুরু করে কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থায়। যা নতুন সম্ভাবনার সাথে সাথে হুমকিতে ফেলবে বর্তমানের অনেকে পেশাকে। হিসেব বলছে, আগামী দুই দশকে দেশের প্রধান শিল্প তৈরি পোশাকে ৬০ ভাগ শ্রমিকই চাকরি হারানোর শংকায় পড়বেন। এমন পরিস্থিতিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশে আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।



লেখক: তারেক আবরার, কম্পিটিটিভ কম্পিউটার প্রোগ্রামার।

ইমেইল: tareqabrar@gmail.com



Comments


Contact

Subscribe

Your details were sent successfully!

Home: Contact
  • t_logo
  • codeforces-logo-with-telegram

©2018 by http://tareqabrar.com. Proudly created with Wix.com

bottom of page