top of page
Home: Blog2
  • Writer's pictureTareq Abrar

বেকারত্বের হাহাকার এবং উচ্চপদে শুন্যতাঃ সংকট নিরসনে তরুণদের করণীয়

বেকারত্ব হচ্ছে বেদনার গিরিপথ, হাহাকারের সর্বোচ্চ চূড়া, হতাশার মহাসাগর। যা পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য এক আতঙ্কের প্রতিচ্ছবি। বেকারত্ব হলো অনিচ্ছাকৃত কর্মহীনতা। এমন ব্যক্তিকে বেকার বিবেচনা করা হয় যিনি সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করা বা কাজের জন্য প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও কোনো কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। বুক ভরা আশা নিয়ে, হৃদয়ের সব উৎসাহ নিয়ে, দুচোখের কল্পনা দিয়ে প্রতিটা মানুষই চায় সে যেন বেকার না থাকে। তবে কেন দিন দিন বেকারত্বের পরিমাণ ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে? আতঙ্কের বিষয় এটাই যে, এ বেকার জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ শিক্ষিত। শুধু শিক্ষিত নয়, অধিকাংশই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী!! তাহলে বেকারত্বের হার বাড়ছে কেন? তবে কি দেশে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে?


সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন দফতর সমূহে বর্তমানে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৬১ পদ শূন্য রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন প্রয়াত জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সরকারি অফিসসমূহে শূন্য পদে লোক নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর অধীনে সংস্থার চাহিদার প্রেক্ষাপটে সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে ৯ম ও ১০ গ্রেডের (১ম ও ২য় শ্রেণী) শূন্য পদে জনবল নিয়োগ করা হয়ে থাকে। এছাড়া ১৩-২০ গ্রেডের (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণী) পদে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার নিয়োগবিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা জনবল নিয়োগ করে থাকে। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হলো- যোগ্য লোকের অভাবে শুন্যপদের একটা বিরাট অংশ পূরণ করা সম্ভব হয়না। ফলে একদিকে চলছে বেকারত্বের হাহাকার, অন্যদিকে যোগ্য লোকবলের অভাবে বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি খাতে কাজ ব্যাহত হচ্ছে।


তাহলে কর্মসংস্থান থাকা সত্ত্বেও শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কেন? প্রশ্ন কি তাহলে শিক্ষার মান নিয়েই? উত্তরটা হলো, হ্যাঁ, শিক্ষার মান নিয়েই যত প্রশ্ন। এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন দায়ী, তেমনি আরো বেশি দায়ী শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের বদ্ধমূল ধারণা এটাই যে- জিপিএ 5.00 ই বুঝি শিক্ষার মানকাঠি!! তাদের ধারণা, জিপিএ 5.00 পাওয়া মানেই জ্ঞান অর্জন করে ফেলা এবং লাইফ সেটেল হয়ে যাওয়া, আর জিপিএ 5.00 না পাওয়া মানে জীবন বৃথা। এ ধারণার কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ছুটছেন জিপিএ 5.00 এর পিছনে, তাঁদের কাছে জিপিএ 5.00 ই বুঝি জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য!! ফলে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারছেনা, তারা জ্ঞানার্জন না করে কেবল কোচিংয়ে পড়ে, গাইডবই পড়ে পরীক্ষায় A+ পেয়ে যাচ্ছে। ব্যস, শিক্ষার্থী খুশি, অভিভাবক খুশি, শিক্ষকমশাই-ও খুশি, স্কুল-ও খুশি; শিক্ষার আর দরকার কী!!! মাঝখান থেকে মাঠে মারা যাচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা ও জ্ঞানার্জন। তার মানে এটা নয় যে- জিপিএ 5.00 এর প্রয়োজন নাই। কিন্তু, প্রকৃত জ্ঞানার্জনকে উপেক্ষা করে, প্রকৃত শিক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুমাত্র জিপিএ 5.00 এর পেছনে ছোটা কোন ধরনের উন্মাদনা!! এটা নিছক হুজুগে কর্মকাণ্ড বা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ উন্মাদনার কারণেই কমে যাচ্ছে শিক্ষার মান, বেড়ে যাচ্ছে শিক্ষিত বেকারের হার। এর থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের বেরিয়ে আসতে হবে, নাহলে বাড়তে থাকবে শিক্ষিত বেকারের হার, দেশ ও জাতি পিছিয়ে পড়বে আরো শত বছর। অবশ্যই জিপিএ 5.00 এর প্রয়োজন আছে। কিন্তু, সর্বাগ্রে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রকৃত জ্ঞানার্জন-ই জীবনের সকল ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।   


অভিভাবকের করণীয়: আপনার সন্তানের প্রকৃত জ্ঞানার্জন নিশ্চিত করুন। আপনার সন্তানকে ৫টা/১০টা কোচিং সেন্টারে পাঠালেই যে সে জ্ঞান অর্জন করে ফেলবে- এমনটা নয়। আপনার সন্তানকে সরকারি স্কুলে/ভালো স্কুলে/কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলেই যে তার উন্নতি অবধারিত- এমনটা নয়। প্রকৃত জ্ঞানার্জনের জন্য সর্বপ্রথম না বুঝে মুখস্ত করা, গাইডবই, কোচিং সেন্টার এসবের উপর নির্ভরশীলতা পরিত্যাগ করুন, শুধু স্কুলের পাঠ্যবই নয়, নানা ধরনের সহ-শিক্ষা কার্যক্রমেও আপনার সন্তানকে অংশগ্রহণ করান। তার মধ্যে এমন উদ্দীপনা জাগিয়ে দিন যেন- সে নিজেই প্রকৃত শিক্ষার্জনে আগ্রহী হয়।


শিক্ষার্থীর করণীয়: মনে রাখতে হবে, তোমার শিক্ষক তোমাকে সব শিখিয়ে দেবেন না, কারণ শিক্ষার কোনো শেষ নেই। তাই তোমার যেটুকু প্রয়োজন, সেটা নিজেকেই ভালো করে বুঝে বুঝে শিখতে হবে,  কোথাও না বুঝলে সেটা শিক্ষক থেকে বুঝে নিবে। কিন্তু, তুমি যদি মনে করো, আমার তো শিক্ষক আছেন, আমার পড়ালেখা আলাদা করে করার দরকার কী? শিক্ষকই সব পড়িয়ে দিবেন। তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। তোমার পড়ালেখা তোমাকেই করতে হবে, শিক্ষক তোমার সহায়ক মাত্র। তবে সর্বপ্রথম তোমার যেটা দরকার সেটা হলো- পরিশ্রম করতে পারার মানসিকতা। তুমি যদি নিজেকে “অমেধাবী শিক্ষার্থী” মনে করো, তাহলে জেনে নাও- “মেধাবী বা মেধা” বলতে কোনো শব্দ নেই। যেটা আছে সেটা হলো- পরিশ্রম। কঠিন পরিশ্রম করবে, সফলতা পাবে; পরিশ্রম করবেনা, সফলতাও নাই- এক্কেবারে সোজা হিসেব। 


শিক্ষকের দায়িত্ব: শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব শিক্ষাদান নয়, তাঁর প্রধান দায়িত্ব শিক্ষার্থীর মধ্যে স্বপ্ন, উৎসাহ ও উদ্দীপনা জাগিয়ে দেয়া যেন সে নিজে থেকেই প্রকৃত জ্ঞানার্জনে আগ্রহী হয়। আপনি আপনার শিক্ষার্থীকে কিছু বুঝিয়ে দিলেন, কিন্তু সে বুঝলো কি বুঝলেনা সেটা যাচাই করলেন না, তাহলে কিন্তু হবেনা। কিছু বুঝিয়ে দেয়ার পর সেটা আদায় করতে হবে বা আদায় করে নিতে জানতে হবে।


সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিক্ষার প্রকৃত মান ফিরিয়ে আনা সম্ভব। শুধু সরকার বা ব্যবস্থাপনার দোষ দিলে হবেনা, সবার আগে সচেতন হতে হবে নিজেকে। তবে, আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তিভিত্তিক জ্ঞানার্জনেও শিক্ষার্থীকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে ফিরে আসবে শিক্ষার প্রকৃত মান, কমে যাবে বেকারত্ব, এগিয়ে যাবে দেশ।



লেখকঃ

তারেক আবরার

কম্পিটিটিভ কম্পিউটার প্রোগ্রামার।




Contact

Subscribe

Your details were sent successfully!

Home: Contact
bottom of page